আপনি কি চান স্মৃতিশক্তি তীক্ষ্ণ, হৃদয় সুস্থ এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্য ঝলমলে? তাহলে আপনার খাদ্যতালিকায় অবশ্যই থাকা উচিত আখরোট! এই ছোট্ট কিন্তু শক্তিধর বাদামটিতে লুকিয়ে আছে অসাধারণ সব পুষ্টি উপাদান, যা আপনার স্বাস্থ্যের যত্নে দারুণ কাজ করে। চলুন জেনে নেওয়া যাক আখরোট খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা:
১০০ গ্রাম আখরোটের পুষ্টিগুণ
মাত্র ১০০ গ্রাম আখরোটে লুকিয়ে আছে পুষ্টির এমন এক সম্ভার, যা আপনার স্বাস্থ্যকে চমৎকারভাবে উন্নত করতে পারে। চলুন, খুঁজে বের করা যাক এই ক্ষুদ্র বাদামটির মধ্যে কী কী আছে:
- ক্যালোরি: ৬৫৪, যা আপনার দৈনিক চাহিদার প্রায় ১৩% পূরণ করতে পারে।
- চর্বি: ৬৫.২ গ্রাম, যার মধ্যে ৫৭.৪ গ্রাম স্বাস্থ্যকর মনো-ইউনস্যাচুরেটেড এবং পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড, হৃদয় সুস্থ রাখে ও কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।
- প্রোটিন: ১৫.২ গ্রাম, শরীরের টিস্যু গঠনে ও মেরামতে গুরুত্বপূর্ণ।
- কার্বোহাইড্রেট: ৬.৭ গ্রাম, যার মধ্যে ২.৭ গ্রাম ফাইবার, হজমে সহায়তা করে ও মধুমেহ নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে।
- ভিটামিন ও খনিজ: তাছাড়া আখরোটে ভিটামিন ই, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, ম্যাঙ্গানিজ, তামা, জিঙ্ক ও সেলেনিয়ামের মতো গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন ও খনিজের প্রচুর পরিমাণ রয়েছে।
আখরোট খাওয়ার উপকারিতা
আপনি কি স্মৃতিশক্তি বাড়াতে চান? হার্টকে সুস্থ রাখতে চান? তাহলে আপনার ডায়েটে নিবড়ই যোগ করুন আখরোট। এই ছোট্ট বাদামটি পুষ্টির পাওয়ারহাউস। নিয়মিত খেলে উপকারিতা অগণিত! চলুন জেনে নেওয়া যাক, কেন আখরোট আপনার স্বাস্থ্যের সেরা বন্ধু হতে পারে:
১ঃ আখরোটে আছে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, যা মস্তিষ্কের কোষগুলোকে সুরক্ষিত রাখে এবং স্মৃতিশক্তি বাড়ায়। পড়াশোনা বা কাজের ফাঁকে কয়েকটা আখরোট খেলে মস্তিষ্ক আরও তীক্ষ্ণ থাকবে।
২ঃ খারাপ কোলেস্টেরল কমিয়ে ভালো কোলেস্টেরল বাড়ায় আখরোট। ফলে হৃদযন্ত্রের রোগের ঝুঁকি কমে। এছাড়া রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণেও সাহায্য করে।
৩ঃ গবেষণায় দেখা গেছে, আখরোট রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে। টাইপ-২ ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এটি উপকারী।
৪ঃ আখরোটে আছে প্রচুর ফাইবার ও প্রোটিন। ফলে দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা থাকে, অनावश्यक খাওয়া কমে। ওজন নিয়ন্ত্রণেও সাহায্য করে।
৫ঃ আখরোটে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে। বিশেষ করে স্তন ক্যান্সার ও প্রোস্টেট ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে পারে।
৬ঃ ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের পাশাপাশি, আখরোটে আছে মেলাটোনিন নামক উপাদান, যা মানসিক চাপ ও হতাশা কমাতে সাহায্য করে।
আখরোট খাওয়ার নিয়ম
আখরোট খাওয়ার নানা মজার উপায় জেনে নিন
১ঃ ক্লাসিক স্টাইলে কাঁচা আখরোট খেতে পারেন। এতে স্বাভাবিক স্বাদ ও সব পুষ্টিগুণ থাকে। একটু ভেজে নিতে চান? হালকা গরম তেলে হালকা বাদামী রঙ ধরিয়ে ভেজে নিন। স্বাদ আরো বেড়ে যাবে!
২ঃ সকালের স্বাস্থ্যকর স্মুদিতে মুঠো করে কয়েকটি আখরোট মিশিয়ে নিন। ফলের স্বাদে মিশে যাবে, পুষ্টিও বাড়বে। দইয়ের সাথে আখরোট মিশিয়ে খেতে পারেন। স্বাদ বদলাবে, স্বাস্থ্যের লাভ দ্বিগুণ হবে।
৩ঃ ফলের সাথে আখরোট মিশিয়ে সালাত বানান। পাবেন স্বাদে ও স্বাস্থ্যে অন্যরকম অভিজ্ঞতা।
৪ঃ পাস্তা, সবজি, মাছের ঝোল ইত্যাদিতে আখরোট ব্যবহার করুন। স্বাদের সাথে রান্নার পুষ্টিগুণ বাড়বে।
গর্ভাবস্থায় আখরোট খাওয়ার উপকারিতা
গর্ভাবস্থায় স্বাস্থ্যকর খাবারের পছন্দ শুধু আপনার জন্যই নয়, আপনার ভেতরে থাকা ছোট্ট জীবনের জন্যও। আর সেই পথ চলার প্রথম সহায় হতে পারে আখরোট।
১ঃ গর্ভাবস্থায় রক্তচাপ বাড়ার ঝুঁকি থাকে। আখরোটে থাকা ভালো চর্বি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে এবং হৃদযন্ত্রকে সুস্থ রাখে।
২ঃ আখরোটে ফোলিক অ্যাসিড আছে, যা গর্ভপাত ও জন্মগত ত্রুটি প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
৩ঃ গর্ভাবস্থায় মেজাজ পরিবর্তন ও হতাশা স্বাভাবিক। আখরোটে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলি মানসিক চাপ ও হতাশা কমাতে সাহায্য করে।
৪ঃ প্রতিদিন কয়েকটা (২-৩টি) আখরোট খেতে পারেন। এতে শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশে অসাধারণ ভূমিকা রাখে। এটি শিশুর চোখের দৃষ্টিশক্তি, স্মৃতিশক্তি এবং মোটর স্কিল উন্নয়নে সাহায্য করে।
আখরোট খাওয়ার অপকারিতা
কিছু ক্ষেত্রে আখরোট ক্ষতিও করতে পারে। তাই আজ জেনে নিন, কাদের আখরোট খাওয়া উচিত না:
১ঃ আখরোটে ট্রিগেরিন নামক প্রোটিন আছে, যা কিছু মানুষের অ্যালার্জির কারণ হতে পারে। গুরুতর ক্ষেত্রে এলার্জিক রিঅ্যাকশন, শ্বাসকষ্ট, এমনকি অ্যানাফাইল্যাক্সিসও হতে পারে। যাদের গোবিন্দা, বাদাম, কাজু ইত্যাদিতে অ্যালার্জি আছে, তাদের আখরোটেও অ্যালার্জি হওয়ার ঝুঁকি বেশি।
২ঃ আখরোটে প্রচুর স্বাস্থ্যকর চর্বি আছে, ঠিকই। কিন্তু প্রতি 100 গ্রামে 650+ ক্যালোরি আছে। সুতরাং, ওজন কমানোর চেষ্টায় থাকলে অতিরিক্ত আখরোট এড়িয়ে চলা ভালো।
৩ঃ যাদের ডাইভারটিকুলাইটিস আছে, তাদের আখরোটের মতো ছোট খাবার এড়িয়ে চলা ভালো। কারণ, এগুলো ডাইভারটিকুলা নামক ছোট থলিতে আটকে যেতে পারে, যা ব্যথা ও সংক্রমণের কারণ হতে পারে।
৪ঃ সার্জারির আগে রক্তক্ষরণ কমাতে কিছু ওষুধ দেওয়া হয়। আখরোট রক্ত পাতলা করে, তাই সার্জারির আগে চিকিৎসকের নির্দেশ ছাড়া এড়িয়ে চলা ভালো।
৫ঃ লিভারের সমস্যা থাকলে, আখরোটে থাকা অ্যাফ্লাটক্সিন নামক বিষাক্ত উপাদান ক্ষতি করতে পারে। চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
৬ঃ কিছু ঔষধের সাথে আখরোটের মিথস্ক্রিয়া হতে পারে। বিশেষ করে রক্তক্ষরণরোধক ঔষধ খাওয়ার সময় সাবধানতা অবলম্বন করুন।
কিছু কমন প্রশ্ন এবং তার উত্তর
প্রশ্ন ১: কতটুকু আখরোট খাওয়া উচিত?
উত্তর: প্রতিদিন 2-3 টি আখরোট (প্রায় 30 গ্রাম) খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। অতিরিক্ত খেলে ওজন বৃদ্ধির ঝুঁকি থাকতে পারে।
প্রশ্ন ২: গর্ভাবস্থায় আখরোট খাওয়া কি নিরাপদ?
উত্তর: সাধারণত গর্ভাবস্থায় আখরোট নিরাপদ। তবে, অ্যালার্জির ঝুঁকি থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
প্রশ্ন ৩: ডায়াবেটিস রোগীদের কি আখরোট খাওয়া উচিত?
উত্তর: হ্যাঁ, ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য আখরোট উপকারী। এতে থাকা স্বাস্থ্যকর চর্বি রক্তে শর্করার নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
প্রশ্ন ৪: আখরোট কি ওজন বাড়ায়?
উত্তর: আখরোটে প্রচুর ক্যালোরি থাকে। তাই, অতিরিক্ত খেলে ওজন বৃদ্ধি হতে পারে। পরিমিত পরিমাণে খান।
প্রশ্ন ৫: বাচ্চাদের কি আখরোট খাওয়া উচিত?
উত্তর: 3 বছরের বেশি বয়সী বাচ্চাদের জন্য আখরোট খাওয়া নিরাপদ। তবে, গিলে ফেলার ঝুঁকি থাকায় ছোট ছোট করে খাওয়ানো উচিত।
প্রশ্ন ৬: আখরোট কি ত্বকের জন্য ভালো?
উত্তর: হ্যাঁ, আখরোটে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বকের বয়সের ছাপ দেরিতে আনতে সাহায্য করে।
প্রশ্ন ৭: আখরোট কি চুলের জন্য ভালো?
উত্তর: হ্যাঁ, আখরোটে থাকা ওমেগা-3 ফ্যাটি অ্যাসিড চুলের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
প্রশ্ন ৮: আখরোট কি হাড়ের জন্য ভালো?
উত্তর: হ্যাঁ, আখরোটে থাকা ক্যালসিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।
প্রশ্ন ৯: কখন আখরোট খাওয়া উচিত?
উত্তর: আখরোট যেকোনো সময় খাওয়া যেতে পারে। তবে, সকালের নাস্তার সাথে খেলে দিনভর শক্তি পাওয়া যায়।
প্রশ্ন ১০: আখরোট কিভাবে সংরক্ষণ করা উচিত?
উত্তর: আখরোট শীতল, শুষ্ক এবং অন্ধকার জায়গায় সংরক্ষণ করা উচিত। এয়ারটাইট কন্টেইনারে রাখলে দীর্ঘ সময় ভালো থাকে।